“লুচি তোমার মান্য ত্রিভুবনে”- গুন গুন করে গাইতে গাইতে এক খানা নরম ময়দার লুচি র সাথে সাদা আলু র চ্চচড়ি দিয়ে গরস বানিয়ে মুখে পুরে চোখ বুঝে চিবতে লাগলেন দামোদর বাবু। দামোদর সেন। খেতে ভাল বাসেন বলে লোকে আড়ালে তাকে দামোদর শেঠ ও বলে। তিনি জানেন, তবে গায়ে মাখেন না। ঘনিষ্ট কেউ অনুযোগ করলে বলেন, তাতে কি? বলে আনন্দ পায় তো বলুক না। তবে খাওয়া টা ঠিক না হলে চারপাশ টা কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড় করে। আয়েস করে লুচি র পর বেশ খানিক টা বোঁদে খেয়ে সকালের জল খাবার এর পর্ব শেষ করলেন। তারপর এক টা ঢাউস ব্যাগ হাতে গেলেন বাজারে। দুপুরের জন্য বাজার করতে। সেটাও জবর দস্ত হবে নিশ্চয়।সরু চালের ভাত, একটু ঘি, সুক্তনি, সোনামুগের ডাল, বেগুনি, বড়ি দিয়ে লাউ চিংড়ি, আলু পোস্ত, ভেটকি ভাজা, সরষে ইলিশ, খাসির মাংস- আহা কি দারুন ফোড়নের গন্ধ বেরবে। আর শেষ পাতে চাটনি, দই, রসগোল্লা-র সাথে খান কতক নলেন গুড়ের সন্দেস। তারপর এক খিলি পান মুখে পুরে একটু চোখ বুজে বিশ্রাম নেবেন।দুপুরের গুরু ভোজনের পর বিকেলের দিকে না হয় একটু ডাবের জল খাওয়া যাবে। আর সন্ধ্যে র দিকে খান দুয়েক মাংসের চপ আর মোচার চপ দিয়ে কিঞ্চিত জলযোগ।এই সব ভাবতে ভাবতে দুলকি চালে বাজার করে ফিরতে ফিরতে তার মনে হল রাতে র খাবারের ত বন্দোবস্ত ই হয়নি। আবার ফেরত গেলেন রাতের খাবারের উপকরন কিনতে।বাসন্তি পোলাও, ছানার ডালনা, ধোকার ডালনা আর ফুলকপি র তারকারি । আর শেষ পাতে পায়েস বা রাবড়ি। ব্যাস রাতে আর বেশি না খাওয়াই ভাল।এই যে তিনি এত খেতে ভাল বাসেন তার স্ত্রী কিন্তু ঠিক এর উল্টো। পরম সুখে শুকনো মুড়ি চিবতে পারেন চারটি বাতাসা দিয়ে। মাঝে মধ্যে যদি একটু ঘুঘনি পান তাহলে ত রানি মনে করেন নিজেকে। দামোদর বাবু নিজের মনেই বলে ফেললেন ‘দূর দূর কোন মানে হয়!’’না হয় না। বসে বসে শুধু দিবা স্বপ্ন দেখবে আর নিজের মনে ভুল বকবে। হ্যাঁ গা তোমাকে যে লোকে আধা পাগোল বলে, সে টা বোঝনা? নাও এটা খেয়ে এবার ক্ষেতে যাও।’ স্বপ্ন স্বর্গ থেকে মাটি তে আছাড় খেলে যে কত জোর শব্দ হয়, সে টা দামোদর বাবু ছাড়া র কেউ বুঝল না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নুন তেল দিয়ে মাখা পান্তা ভাতের থালা টা টেনে নিলেন। কাঁচালঙ্কা, পিঁয়াজ দিয়ে এক গরস মুখে পুরে বললেন আঃ শান্তি।